রূপগঞ্জে হাসপাতালে হট্টোগোলের ভিডিও করায় সাংবাদিককে মারধর

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া এক প্রসতির নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। ওই শিশুর মৃত্যু ‘ভুল চিকিৎসার’ কারণে হয়েছে দাবি শিশুটির স্বজনরা গিয়ে হাসপাতালে হট্টগোল করে।

এসময় হাসপাতালের কর্মচারীদের সঙ্গে শিশুটির পরিবারের মধ্যে বাকবিন্ডাসহ মারামারির ঘটনা ঘটে। সেখানে গিয়ে ভিডিও চিত্র ধারণ করতে গেলে মারধর করা কালবেলা পত্রিকার স্থানীয় এক সাংবাদিকেও। হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী লাঞ্চিত করে করে আরও কয়েকজনকে।

মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভেতরে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সাংবাদিকদের লাঞ্চিত করা সহ মারধরের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে হাসপাতালের বাইরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি রূপগঞ্জের সাংবাদিকরা।

মারা যাওয়া শিশুটির পরিবার জানায়, অন্তঃসত্ত্বা মাহফুজা আক্তার নামে এক গৃহবধুকে গেল বুধবার ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসে তার পরিবার। পরদিন বৃহস্পতিবার রাতে ওই নারী প্রসবের সময় হলে ডা. সাবিহা শিমুল নামের এক চিকিৎসক ওই নারীকে ইনজেকশন দেয়।

এরপর হাসপাতাল থেকে ওই নারীর পরিবারকে জানিয়ে দেয়া হয় উন্নাত চিকিৎসার জন্য তাকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে। পরে তাকে ঢাকার মগবাজার আদ্বদীন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখানে ওই নারীর মৃত সন্তানের জন্ম দেন। তখন এ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক নবজাতক শিশুর পিতা শাহীন মিয়া জানায়, শিশুর মাকে এ হাসপাতালে আনার আগেই শিশুটি মারা গেছে।

নবজাতকের পরিবার আরও জানায়, মঙ্গলবার দুপুরে শিশুটির পরিবার ও স্বজনরা ওই হাসপাতালে যায়। তখন শিশুটির পরিবারে প্রতি শোক প্রকাশ না করে উল্টো বিল দাবি করে হাসপাতালের কর্মকর্তারা। একপর্যায়ে শিশুটির স্বজনদের সঙ্গে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাকবিতন্ডা শেুরু হয়।

এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে হট্টোগোল চলে এবং একে ‍উপরের দিকে মারমুখী হয়। হাসপাতালে হট্টোগোলের খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান স্থানীয় কয়েকজন সংবাদকর্মী। তাদের মধ্যে দৈনিক কালবেলার রূপগঞ্জ প্রতিনিধির দায়িত্বে কর্মরত জাহাঙ্গীর মাহমুদ ঘটনার ভিডিও চিত্র ধারণ করতে গেলে তাকে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মারধর ও লাঞ্চিত করে।

শিশুর পিতা শাহীন মিয়ার অভিযোগ, হাসপাতালের অবহেলা ও গাফলতির কারণে তার সন্তান মারা গেছে। তাদের প্রতিশোক প্রকাশ না করে গলা কাটা বিল দাবি করে। প্রতিবাদ করায় তাদের মারধর করা হয়। হাসপাতালের লোকজনের হামলায় তার কয়েকজন স্বজন আহত হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে দৈনিক কালবেলার রূপগঞ্জ প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর মাহমুদ বলেন, স্থানীয় এক জনের মাধ্যমে হাসপাতালে হট্টোগোলের খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যাই। আমি ছাড়াও তিন থেকে চারজন সাংবাদিক সেখানে আসেন।

ভেতরে গিয়ে দেখি একজন নারীকে কয়েকজন লোক টানা হেচরা করছে, তখনি মোবাইল বের করে ভিডিও ধারণ করতে যাই। এসময় হাতে মোবাইল দেখে হাসপাতালের কর্মকর্তাসহ কর্মচারীরে আমাকে লাঞ্চিত করে। খারে ও চেহারায় চরথাপ্পর মারে।

বলেন, আহত সাংবাদিক জাহাঙ্গীর

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগের প্রধান সারোয়ার বলেন, মারা যাওয়ার শিশুর স্বজনরা এসে ডাক্তারের রমে ডুকতে চাইলে কর্মচারীরা বাঁধা দেয়। এসময় সেখানে উত্তেজনাকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তবে সাংবাদিককে কারা মেরেছে তা জানা নেই বলে দাবি করেন তিনি।

বরং হাসপাতাল ভাংচুর করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে বলেন, আমাদের হাসপাতালে সিসি ক্যামেরা দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তবে হট্টোগোলের খবর পেয়ে হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয় বলে জানান রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা। তিনি বলেন, মারা যাওয়া শিশুর পরিবারসহ সাংবাদিকরা থানায় এসেছে। তারা অভিযোগ করছে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সাংবাদিককে মারধর ও লাঞ্চিত করার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে ওই হাসপাতালের বাইরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক আন্দোলন করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রূপগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক খলিল সিকদার।

তিনি বলেন, ইউএস বাংলার বিরুদ্ধে প্রায় লোক মারা যাওয়ার খবর আসে। লোক মারা গেলে তো সাংবাদিক ঘটনা জানতে সেখানে যেতেই পারে। ঘটনার ভিডিও করলে সাংবাদিককে এভাবে মারবে?। হাসপাতালের যেসব কর্মকর্তা- কর্মচারী সাংবাদিক লাঞ্চিতসহ মারধর করেছে তাদের শাস্তি চাই।