তৈমুরের হলফনামায় থাকা ‘নির্মাণাধীন’ বাড়িতে ভাড়াটিয়া

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের মধ্যে এবার সবচেয়ে বড় চমক দেখা যাবে নারায়ণগঞ্জ-১ আসন রূপগঞ্জে। এখানে ভোটের লড়াইয়ে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সঙ্গে থাকছেন তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার।

তৈমুর আলম খন্দকার এক সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ছিলেন। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাকে বহিষ্কার করা হয়। বর্তমানে তিনি নতুন রাজনৈতিক দল তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব।

নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গেল ২৯ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনায় তিনি উল্লেখ করেন, বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট বা দোকান ভাড়াসহ অনান্য বাবদ ৭ লাখ ৭২ হাজার ৮৩৯ টাকা বার্ষিক আয় তার। শেয়ার সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংকে আমানত আছে ৪৬ হাজার ৪০৯ টাকা। আইনজীবী হিসেবে তার বার্ষিক আয় ৪ লাখ টাকা।

তৈমুরের কাছে এখন নগদ ৬ লাখ ৫১ হাজার ৫০২ টাকা আছে। আর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার ৪৯৮ টাকা।

এছাড়া তৈমুর আলম খন্দকার রাজউকের পাঁচ কাঠা জমির মালিক। যেখানে কোনো স্থাপনা নেই। আর নারায়ণগঞ্জে ২৭৬ বর্গমিটারের নির্মাণাধীন একটি বাড়ি রয়েছে তার। রাজধানীর তোপখানায় ৭৪.৩৪ বর্গমিটারের একটি স্পেসের কথাও হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি।

তৈমুর আলম খন্দকারের হলফনামা

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তৈমুরের দেওয়া হলফনামায় তিনি নারায়ণগঞ্জের যে বাড়িটিকে নির্মাণাধীন দেখিয়েছেন সেখানে এখন ভাড়াটিয়া থাকেন।

সাততলা ওই বাড়ির তিনতলা পর্যন্ত ভাড়াটিয়া ও তৈমুর আলম খন্দকারের পরিবার বসবাস করেন। বাড়িটির নিচতলায় মজলুম মিলনায়তন। এমনকি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় ওই বাড়ি থেকেই তিনি নির্বাচনি কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

তবে তৈমুরের রূপগঞ্জের পৈত্রিক বাড়ির অংশের কথা হলফনামার কোথাও তিনি উল্লেখ করেনি। অথচ তিনি নারায়ণগঞ্জ-১ আসন রূপগঞ্জ থেকে নির্বাচন করছেন।

২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় তৈমুর আলম খন্দকার উল্লেখ করেছিলেন, বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট বা দোকানভাড়াসহ অনান্য বাবদ ৫ লাখ ৭৪ হাজার ১৪১ টাকা রয়েছে।

শেয়ার সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংকে আমানত আছে মাত্র আড়াই হাজার টাকা। আইনজীবী হিসেবে তার বার্ষিক আয় ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা। তার কাছে নগদ টাকার পরিমাণ ছিল ৫ লাখ টাকা। আর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমানো কোনো টাকা ছিলো না তার।

এছাড়া রাজউকের পাঁচ কাঠা জমি, নারায়ণগঞ্জে ২৭৬ বর্গমিটারের নির্মাণাধীন একটি বাড়ি, যৌথ মালিকানায় ৩১৪ বর্গমিটারের একটি ফ্ল্যাটের কথা হলফনামায় জানানো হয়। যৌথ মালিকানায় কৃষি জমির পরিমাণ উল্লেখ করা হয় ২০০ শতাংশ ও অকৃষি জমির পরিমাণ লেখা ছিল ৩০ শতাংশ।

গত একবছরে তৈমুর আলম খন্দকারের নগদ টাকা, ব্যাংকে জমা করা অর্থসহ অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে। পাশাপাশি বার্ষিক আয় বেড়েছে দেড় গুণ।

হলফনামার তথ্য অনুসারে

তবে টাকা ও সম্পদ বাড়ার পেছনের কারণ জমি বিক্রি বলেও জানান তৈমুর আলম খন্দার। তিনি বলেন, আমার ও আমার স্ত্রীসহ যৌথ মালিকানায় থাকা জমি বিক্রি করা হয়েছে। তাই নগদ টাকা ও ব্যাংকে জমা অর্থ বেড়েছে। এছাড়া আমার দুই মেয়ের মধ্যে একজন আমেরিকা ও অন্যজন লন্ডন থাকে। তারা বিদেশ থেকে টাকা পাঠায়। আর রূপগঞ্জের বাড়ি পৈত্রিক ভিটা, যা এখনও বাপ-দাদার নামেই আছে।

নারায়ণগঞ্জের বাড়ি ভাড়া দিয়ে কেন নির্মাণাধীন দেখানো হলে জানতে চাইলে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব বলেন, সাততলার মধ্যে নিচতলা মিলনায়তন আর বাকি ছয়তলার মধ্যে ৪ ও ৫ তলা এখনও নির্মাণাধীন। আর একটি তলায় আমি থাকি ও অন্যটি ভাড়া হলেও টেক্স ফাইলে উল্লেখ করা আছে বাড়িটি নির্মাণাধীন। টেক্স ফাইলে যেহেতু বাড়িটি এখনও নির্মাণাধীন, তাই হলফনামায়ও তা উল্লেখ করা হয়েছে। সূত্র. দেশ টিভি