প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় মৎস্য এখন লাভবান সেক্টর: স্পিকার

জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, সরকারের নীতিসহায়তাসহ নানান ধরনের উদ্যোগের কারণে মৎস্য খাতে নীরব বিপ্লব হচ্ছে। মৎস্য খাতে এত যে উন্নতি ও সমৃদ্ধি, তা কিন্তু এমনি এমনি হয়ে যায়নি, বরং পরিকল্পিত কাজের জন্যই হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত ‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২৩’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি ‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২৩’ এর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ সচিব ড. নাহিদ রশীদ এবং মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক খন্দকার মাহবুবুল হক।

জনগণের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে খাদ্য নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখার জন্য সকলকে মৎস্য খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত আগ্রহ ও কার্যকর দিকনির্দেশনায় মৎস্য সেক্টর একটি লাভবান সেক্টরে পরিণত হয়েছে। জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে গৃহীত কর্মসূচি দেশের জনগণকে মৎস্য সম্পদের গুরুত্ব উপলব্ধি করানোর পাশাপাশি এই খাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করবে। মৎস্য খাতের সুরক্ষায় সকলকে সচেতন হতে হবে।

ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু একজন মহান ও দূরদর্শী নেতা ছিলেন। বঙ্গবন্ধু মৎস্য খাতকে সবসময় অগ্রাধিকার দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে এ গণভবন লেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করার মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সামাজিক আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু প্লাবনভূমিসহ নদী-নালা, খাল-বিল ও হাওড়ে গুণগত মানসম্পন্ন পোনা অবমুক্ত করার গুরুত্ব অনুভব করেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় এখনও গণভবন, বঙ্গভবন ও জাতীয় সংসদ লেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করা হচ্ছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৎস্যচাষি, জেলেদের উন্নয়নে কাজ করেছেন। বদ্ধ ও উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের চাষ, নদী ও সমুদ্রে মাছের অভয়াশ্রম ঘোষণা ও বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে নানা ধরনের নীতিসহায়তা দিয়েছেন। ফলে দেশে মৎস্য খাতে নীরব বিপ্লব হচ্ছে।

স্পিকার বলেন, আজকে মৎস্য সেক্টর লাভবান সেক্টরে পরিণত হয়েছে। জাতীয় অর্থনীতিতে মৎস্য খাতের অবদান বিবেচনায় এনে দেশের মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এতে একদিকে উন্মোচিত হয়েছে নতুন কর্মক্ষেত্র। হ্রাস পাচ্ছে বেকারত্ব। অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে। পুষ্টি চাহিদা পূরণ হচ্ছে। রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, আমাদের এবারের মৎস্য সপ্তাহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে স্মার্ট ফিশারিজ তৈরি করা। এর জন্য মাছের বহুমুখীকরণে আধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত করে কাজ করা হচ্ছে। মৎস্য খাতে বর্তমানে যে অনুদান, প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে, তা শেখ হাসিনার সরকার ছাড়া অন্য কেউ এতটা দেয়নি। আমরা নিজেদের চাহিদা পূরণ করে বিশ্বের ৫২টি দেশে মাছ রফতানি করছি। এতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক অর্থ আয় করা সম্ভব হচ্ছে। কিছু দুষ্টু মানুষের লোভের কারণে মাছের বৈদেশিক বাজার নষ্ট হয়েছিল। তারা আয়রনসহ নানান ধরনের খারাপ জিনিস ঢুকিয়ে দিয়েছিল। বর্তমানে বিদেশে মাছ রফতানি ও বিদেশ থেকে মাছ, মাছের খাবারসহ অন্যান্য পণ্য আনলে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে তিনটি আন্তর্জাতিক মানের ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে।

প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও মৎস্য ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার জাতীয় মৎস্য পদক-২০২৩ প্রদান করেছে। এ বছর নির্ধারিত ৯টি ক্ষেত্রের মধ্যে আটটি ক্ষেত্রে আটটি স্বর্ণ, সাতটি ক্ষেত্রে সাতটি রৌপ্য ও ছয়টি ক্ষেত্রে ছয়টি ব্রোঞ্জ পদক প্রদান করা হয়। স্বর্ণপদক পাওয়া প্রত্যেককে ১৮ ক্যারেট মানের ১৫ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণের মেডেল, সম্মাননা সনদ ও নগদ ৫০ হাজার টাকা, রৌপ্যপদক পাওয়া প্রত্যেককে ৫০ গ্রাম ওজনের একটি রুপার মেডেল, সম্মাননা সনদ ও নগদ ৩০ হাজার টাকা এবং ব্রোঞ্জপদক পাওয়া প্রত্যেককে ৩৫ গ্রাম ওজনের একটি ব্রোঞ্জের মেডেল, সম্মাননা সনদ ও নগদ ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, হুইপ আতিউর রহমান আতিক, হুইপ ইকবালুর রহিম , আদিবা আনজুম মিতা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।