ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত বিতর্কিত ঠিকাদার জি কে শামীমকে অর্থপাচারের দায়ে করা মামলায় ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তার তিন কোটি ৮৩ লাখ ৩৫ হাজার ৮১৪ টাকা অর্থদণ্ডও করা হয়।
সোমবার (১৭ জুলাই) দুপুরে ঢাকার বিশেষ জজ মো. নজরুল ইসলাম এই রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার আগে শামীমকে এজলাসে আসামির কাঠগড়ায় রাখা হয়। রায়ের পর তাকে কারাগারে নেওয়া হয়।
জি কে শামীমের আইনজীবী ও ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু রায়ের তথ্য জানিয়েছেন।
গত ১৫ জুন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০-এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে ২৫ জুন মামলার রায় ঘোষণা ও অধিকতর যুক্তি উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য করেছিলেন। সেদিন আসামিপক্ষের আইনজীবী অধিকতর যুক্তি উপস্থাপন করেন। এরপর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০-এর বিচারক রায় ঘোষণার জন্য ১৭ জুলাই দিন ধার্য করেন। মামলাটিতে চার্জশিটভুক্ত ২৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. মোরাদ হোসেন, মো. জাহিদুল ইসলাম, মো. শহীদুল ইসলাম, মো. কামাল হোসেন, মো. সামসাদ হোসেন ও মো. আনিছুল ইসলাম। জি কে শামীমসহ আট আসামিই কারাগারে।
২০২০ সালের ৮ আগস্ট এই মামলায় শামীমসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ওই বছরের ১০ নভেম্বর আটজনের বিরুদ্ধে এই মামলায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
রাজধানীর গুলশান থানার এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ২৩ সাক্ষীকে আদালতে হাজির করে। এই মামলায় ১৫ জুন রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, দেশের ১৮০টি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৩৩৭ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত রয়েছে শামীমের। এ ছাড়া ঢাকায় দুটি বাড়িসহ প্রায় ৫২ কাঠা জমির মালিক তিনি। এসবের দাম ৪১ কোটি টাকা। শামীম তাঁর অস্ত্রধারী সাত দেহরক্ষীকে দিয়ে মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে টেন্ডারবাজি, বাস টার্মিনাল ও গরুর হাটে চাঁদাবাজি করে এসব সম্পদ অর্জন করেছেন।
মামলা তদন্ত সূত্রে জানা যায়, জি কে শামীম ও তার পরিবার বাংলাদেশ থেকে অবৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থ পাচারের উদ্দেশ্যে মজুত রেখেছে। এছাড়া আসামি যেকোনো সময় মজুত করা অর্থ হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার প্রক্রিয়া নিতে পারে। মামলার সুষ্ঠু-তদন্তের স্বার্থে অপরাধলব্ধ আয় সংক্রান্ত ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন। আসামির অপরাধলব্ধ আয় অবরুদ্ধ না হলে ব্যাংক হিসাবে জমা করা অর্থ হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে আইনের উদ্দেশ্যে ব্যাহত হতে পারে। ওই হিসাবগুলোতে কয়েকশ কোটি টাকা রয়েছে বলে জানা যায়।
২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশানে নিজ কার্যালয় থেকে সাত দেহরক্ষীসহ শামীম গ্রেফতার হন। গ্রেফতারের আগে শামীম কখনো নিজেকে যুবলীগের সমবায়বিষয়ক সম্পাদক আবার কখনো নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হিসেবে পরিচয় দিতেন। সামনে-পেছনে সাতজন সশস্ত্র দেহরক্ষী নিয়ে তিনি চলাফেরা করতেন। শামীমের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়।
এর মধ্যে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর শামীম ও তাঁর সাত দেহরক্ষীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।