রূপগঞ্জের বরপায় জঙ্গি আস্তানায় তিন বোমা বিস্ফোরণ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বরপা এলাকায় একটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে শক্তিশালী তিনটি বোমা উদ্ধার করেছে ডিএমপির অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)৷ এ জঙ্গি আস্তানাটি আনসার আল ইসলামের সদস্যের বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটা থেকে উপজেলার বরপা এলাকার প্রবাসী জাকির হোসেনের চারতলা ভবনটিকে প্রথমে ঘিরে রাখে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট ও পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা।

সকাল থেকে বাড়িটি ঘিরে রাখলেও দুপুর দেড়টার দিকে শুরু হয় মূল অভিযান। চলে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। এসময় ভবনের তিন তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয় শক্তিশালী তিনটি বোমা। সাড়ে তিন ঘণ্টাব্যাপী চলা এ অভিযানে একে একে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধ্বংস করা হয় বোমাগুলো।

অভিযান শেষে ডিএমপির অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) এর পুলিশ সুপার সানোয়ার হোসেন জানায়, গত ৫ জুন নরসিংদীতে এক অভিযানে একটি রাইফেলসহ একজন জঙ্গি গ্রেপ্তার হন। পরে ৯ জুন নেত্রকোনায় একটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। এটি আনসার আল ইসলামের একটি প্রশিক্ষণ শিবির ছিল।

সেখানে নতুন জঙ্গি সদস্যদের বিস্ফোরক তৈরি ও তথ্য-প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলে। গত সোমবার কক্সবাজার থেকে এক নারী জঙ্গি সদস্য গ্রেপ্তার হন। তিনি নেত্রকোনার ওই জঙ্গি আস্তানা থেকে পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রূপগঞ্জের বরপা এলাকায় আরেকটি জঙ্গি আস্তানা চিহ্নিত হয়৷

তিনি বলেন, চারতলা ভবনে মোট বিশটি কক্ষ রয়েছে৷ একটি ফ্ল্যাট তালাবদ্ধ ছিল। এটি গত দু’দিন যাবৎ তালাবদ্ধ৷ আনসার আল ইসলামের দুইজন পুরুষ সদস্য সার্বক্ষনিক এ ফ্ল্যাটে থাকতেন। তাদের মধ্যে একজন নেত্রকোনার জঙ্গি আস্তানাটিতে প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন।

কয়েকদিন আগে ওই পুরুষদের একজনের স্ত্রী পরিচয়ে এক নারীও ফ্ল্যাটে থাকা শুরু করেন। নারীর সঙ্গে দুইজন শিশু সন্তানও ছিল। তবে তাদের কাউকে ফ্ল্যাটে পাওয়া যায়নি। তারা আগেই পালিয়ে গেছেন।

বাড়িটিতে বোমা তৈরি হতো জিানিয়ে তিনি বলেন, ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে তথ্য ও প্রযুক্তিগত কাজ হতো, অন্য কক্ষে আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) তৈরির কাজ হতো৷ ফ্ল্যাটে তিনটি আইইডিসহ এসব তৈরির সরঞ্জামাদি পাওয়া গেছে৷

এখানা থেকে তিনটি আইইডির একটি ফ্ল্যাটের ভেতর এবং বাকি দু’টি উচ্চমাত্রা ও বহনে ঝুঁকিমুক্ত হওয়ায় বাইরে এনে খালি জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়৷ এছাড়া মোড়কে মোড়ানো দু’টি চাপাতি ও কিছু ছুরি পাওয়া গেছে৷

জঙ্গিদের হামলার পরিকল্পনা ছিলো জানিয়েছে পুলিশ সুপার সানোয়ার বলেন, সবসময়ই জঙ্গিদের একটা হামলার পরিকল্পনা থাকে। ঢাকার অদূরে যেহেতু তারা আস্তানা গড়েছিল, হয়তো তাদের কোনো পরিকল্পনা ছিল। যদি তাদের পরিকল্পনা থেকেও থাকে তা গত কয়েকদিন অভিযানের কারণে ভেস্তে গেছে।

ডিভাইসের আকার বড় হলে সাধারণত তারা (জঙ্গি) বহন করে। যে আকারের বোমা আমকা পেয়েছি তা দেখে মনে হচ্ছে এগুলো এখানে বানানো হয়েছে৷

এটিইউ এর পুলিশ সুপার আরো জানায়, বিগত সময় নেত্রকোনা ও কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গি সদস্যের দেয়া তথ্য মতে রূপগঞ্জের এই বাড়িটিকে শনাক্ত করা হয়। তবে বাড়িতে থাকা আনসার আল ইসলামের সদস্যরা আগে পালিয়েছে। তদন্তে তাদের নাম বেরিয়ে এসেছে। তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নিতে মামলা হবে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

এদিকে অভিযানের আগেই আশপাশের বসতিসহ ওই ভবনের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয় পুলিশ। অভিযান শুরুর পর থেকে বোমার বিকট শব্দে কেঁপে উঠে পুরো এলাকা। এসময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয়দের মধ্যে। বেশদূর থেকে দঁড়িয়ে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা দেখে স্থানীয়রা। দিনভর আশপাশের বাড়ির বাসিন্দা ছিলেন অন্যত্র। পরে অভিযান শেষে থানা পুলিশের হেফাজতে বাড়িটি রাখা হয়।

এর আগে চারতলা ওই বাড়ির নীচ তলার বাসিন্দা সুন্নত আলী জানিয়েছেন ৪০-৪২ বছর বয়সী এক ব্যক্তি গত তিন মাস আগে তিন তলার ওই রুমটি ভাড়া নেয়। এরপর এক নারীসহ দুইজন শিশুও ছিলো বাড়িটিতে। এছাড়া আরও একজন ব্যক্তি এই বাড়িতে আসা যাওয়া করতো বলেও জানান তিনি।

দিনভর অভিযানে থাকা রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি দিপক চন্দ্র সাহা বলেন, অভিযান ঢাকার করা হলেও থানা পুলিশের একটি তদন্ত দল থাকবে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের পর এটিইউ সহযোগিতায় যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।